ছেলের বিরুদ্ধে কবুতর ও মুরগি চুরির অভিযোগ এনে গ্রাম্য সালিসে এক নারীকে নাকে খত দিতে বাধ্য করছেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নেছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া।
ফেনীতে দুই কিশোরের বিরুদ্ধে কবুতর ও মুরগি চুরির অভিযোগ এনে তাঁদের মায়েদের নাকে খত দিতে বাধ্য করেছেন স্থানীয় এক বিএনপি নেতা। ফেনী সদর উপজেলায় ঘটে যাওয়া এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভিডিওটি দেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেট ব্যবহারকারীরা। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের বিএনপির সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের দলীয় পদ স্থগিত করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, নির্যাতিত নারী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামে ১ মে রাতে গ্রাম্য সালিসি বৈঠক বসে। সালিসে আশপাশের চার এলাকার মানুষকে ডাকা হয়। এ সময় কবুতর ও মুরগির মালিক জাহাঙ্গীর তাঁর প্রাণী চুরির অভিযোগ আনেন। সালিসে উপস্থিত দুই কিশোরকে এ জন্য দায়ী করা হয়। এরপর নাকে খত দেওয়ানো হয় তাঁদের মায়েদের।
মায়েদের হেনস্তা করায় বিচার চেয়েছেন সন্তানেরা। এমন অমানবিক ঘটনা তাদের মায়ের সঙ্গে ঘটায় তারা প্রশাসনের কাছে বিচার চেয়েছে।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন নাকে খত দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, পরিবেশ–পরিস্থিতির কারণে এমনটি করতে হয়েছে। তবে এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন বলেও তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকার ফেনী ইউনিটের সংগঠক তন্বী সোম বলেন, এভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় দুই মাকে হেনস্তা করা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। ছোট একটি বিষয় নিয়ে শত শত মানুষের সামনে এমনভাবে ঘটে যাওয়া এ ঘটনা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। জড়িত সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।
ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) হাবিবুর রহমান বলেন, সালিসি বিচারে দুই মাকে নাকে খত দেওয়ার বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফেনী সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুর রহমান ও সদস্যসচিব আমান উদ্দিন কায়সার সাব্বির স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের বিএনপির সব পর্যায়ে পদ স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।